কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কারাবরণ করলেও অস্ত্র জমা দেননি ইয়াবা সম্রাট বদি

আজিম নিহাদ::

আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহার করে ইয়াবার আন্তর্জাতিক চক্রের ডন বনে যাওয়া সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি সরকার পতনের পর নিজেকে রক্ষা করতে চলে গিয়েছিলেন আত্মগোপনে।

বেশকিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর চট্টগ্রামের একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব। এরপর ২০ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে বদিকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত সাড়ে ১৫ বছর সীমান্তের সাম্রাজ্য এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করা বদির আপাতত ঠিকানা কক্সবাজার কারাগার।

বদি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জাল থেকে রক্ষা করতে না পারলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন নিজের নামে লাইসেন্স করা অস্ত্রটি। গত ৩ সেপ্টেম্বর লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন থাকলেও বদি তার নামে ইস্যু করা লাইসেন্সধারী অস্ত্রটি জমা দেননি বা কারো মাধ্যমে জমা করাননি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে পাঠানো জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী বদির অস্ত্রটি এখনো জমা পড়েনি। কক্সবাজারে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরে লাইসেন্স নেয়া ২০৫টি অস্ত্রের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে ৯১টি অস্ত্র। এখনো জমা দেয়নি ১১৪টি অস্ত্র। যা উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টার মধ্যে লাইসেন্সধারী অস্ত্রগুলো জমা দেয়ার নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী ৯১টি অস্ত্র বিভিন্ন থানায় জমা দিয়েছে। যেসব অস্ত্র জমা পড়েনি তাদের তালিকা যৌথ বাহিনীকে হস্তান্তর করেছেন তারা।

অস্ত্র জমা দেয়া তালিকার মধ্যে সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয়, সাবেক এমপি কমলের ডানহাত হিসেবে খ্যাত রুস্তম আলী চৌধুরীসহ আলোচিত অনেকেই রয়েছেন।

আবার অনেক আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা দেননি। অস্ত্র নিয়ে বর্তমানে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন, এসব অস্ত্র ব্যবহার করে নাশকতা করার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি একাধিক সূত্রের।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের প্রভাবশালী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক তার নামে লাইসেন্সকৃত শটগান জমা দেননি। যেটি তিনি ২০১৯ সালে নিজের নামে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। অস্ত্র জমা দেননি জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী। ২০১৩ সালে তার অস্ত্রটি লাইসেন্স নিয়েছিলেন।

নিজের নামে লাইসেন্স নেয়া একটি শটগান ও একটি পিস্তল জমা দেননি মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলোচিত ইয়াবা ও জলদস্যু মাফিয়া মকসুদ মিয়া। ২০১৫ ও ১৬ সালে নিজের নামে নেয়া দুটি বৈধ অস্ত্র মকসুদ মিয়া প্রায়ই ব্যবহার করতেন অবৈধ কাজে।

অস্ত্র জমা দেননি সালাউদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, মোশাররফ হোসেন, ফেরদৌসসহ আলোচিত অনেক আওয়ামী লীগ নেতা।

গত ১৫ বছরে দল ক্ষমতায় থাকা স্বত্বেও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নেননি আলোচিত এবং প্রভাশালী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীসহ অনেকেই। তবে তাদের হাতে প্রায় সময় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ ছাত্রদের আন্দোলন দমনে কক্সবাজার শহরে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতার হাতে অস্ত্র দেখা গেছে। এসব অস্ত্র প্রকাশ্যে ব্যবহার করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোখে লালফিতা বেঁধে রেখেছিল। যার ফলে তাদের গুলিতে শহরে প্রাণ হারিয়েছিল দুইজন মানুষ।

কক্সবাজার শহরে সাবেক এমপি কমলের নেতৃত্বে আন্দোলন দমনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের ব্যবহার করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, শহর যুবলীগের সভাপতি ডালিম বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহেদ এমরান, আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন সিকদার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হোসেন শাকিল, আওয়ামী লীগ নেতা দীপক দাশসহ প্রভাবশালী নেতারা।

আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটার আগেই লাইসেন্সধারী অস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র দ্রুত উদ্ধারের দাবি সাধারণ মানুষের।

পাঠকের মতামত: